ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় দু’অবুঝ শিশু বাঁচতে চায় থ্যালাসেমিয়ায় ওদের জীবন বিপন্ন

IMG_20160711_170212-300x201নাজিম উদ্দিন, পেকুয়া :::

পেকুয়ায় থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত নিষ্পাপ অবুঝ দু’ভাই বোনের জীবন বিপন্ন প্রায়। মারাত্বক রক্তশূন্যতায় মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে ওদের জীবন এখন নিভু নিভু। পৃথিবীর মায়া মমতা ও আলো বাতাস ছেড়ে চলে যাওয়ার মত উপক্রম হয়েছে হতভাগ্য শিশু দু’ভাই বোনের। রক্তের জন্য চটপট করছে। একটু স্বস্তি পেতে মাটিতে দেহ গড়িয়ে দিয়ে আচঁড়ছে মাটি। জটিল থ্যালেসেমিয়ায় ওদেরকে গ্রাস করে ফেলেছে। জন্মের পর থেকে শরীরে কৃত্রিম রক্ত দিয়ে এদের বাচিয়ে রাখা হয়েছে। তারা চার ভাই বোন। বড় বোন সানজিদা সোলতানাও একই রোগে আক্রান্ত ছিল। জন্মের পর থেকে তাকেও রক্ত সরবরাহ দিয়ে বাচিয়ে রাখা হয়। কিন্তু নিষ্টুর থ্যালাসেমিয়া কেড়ে নিয়ে সানজিদার প্রান। তার অপর দু’ভাই বোন আসিফা নুর ও ইয়াছিন আরাফাত তামিম এর একই পরিনতি। তারা দু’জনই এ জটিল রোগ আক্রান্ত। ইয়াছিন আরাফাত তামিমের বয়স হয়েছে মাত্র তিন বছর। আসিফা নুরের বয়স সবে মাত্র ৯বছর। এদের মধ্যে আসিফা নুর পড়া লেখার দিকে মনোযোগও দিয়েছে। পৃথিবীতে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে মেয়েটি। অন্য শিশুদের মত ব্যাগ কাঁেধ নিয়ে শিশু নিকেতনেও যায়। তবে তার পড়া লেখা অনিয়মিত। রক্ত শূন্যতা দেখা দিলে বিদ্যালয়ে যাওয়া থেমে যায়। বাবু নামে এক ভাই ওই পরিবারে একমাত্র সুস্থ শিশু। বিধতা তাকে সুস্থ রেখেছে। অন্য সবাই থ্যালাসেমিয়ায় গ্রাস করেছে। দরিদ্র পরিবারের তিন সন্তানের এমন কঠিন পরিনতিতে অসহায় হয়ে পড়েছে তার বাবা-মা। নিরব অশ্রু জড়া ছাড়া আর কি করার আছে দরিদ্র মা-বাবার। প্রতি মাসে একবার করে দু’শিশুকে রক্তের যোগান দিতে হয়। প্রতিমাসের ৪-৫তারিখের মধ্যে রক্ত সঞ্চালনের জন্য দু’শিশুকে নিয়ে যেতে হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এক সময় রক্ত অর্থ দিয়ে ক্রয় করা হত। এখন আর অর্থের যোগান নেই। তবে মানবতা ও মানবিকতার জন্য মানুষ তাদেরকে বিনা পয়সায় রক্তদান করছে। যত বয়স হচ্ছে শিশুদের রক্তের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে শরীরে। বর্তমানে দু’জনকে এক পাউন্ড করে রক্ত দিতে হচ্ছে। তাদের রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন রক্তের প্রয়োজন আরো বেড়ে যাবে। থ্যালাসেমিয়া জটিল রক্ত শূন্যতা রোগ। শিশু দু’টিকে বাঁচাতে হলে আজীবন এভাবে রক্ত দিতে হবে। তবে এর থেকে একমাত্র নিরাময় ও নিস্তার হচ্ছে অপারেশন। তবে এ অপারেশন ব্যয় বহুল্ দেশে এর সার্জারির ব্যবস্থা নেই। উন্নত দেশে এর অপারেশনের জন্য উত্তম স্থান। আসিফা নুর ও ইয়াছিন আরাফাত তামিমদের বাড়ি উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মুহুরীপাড়া এলাকায়। তাদের পিতা গিয়াস উদ্দিন এক দরিদ্র কৃষক। লবন চাষ ও কৃষি কাজ করে সংসার চালায়। এক সময় কঠোর পরিশ্রম করে সংসার চালাতেন। দু’সন্তানকে তার শরীর থেকে একাধিকবার রক্ত দিয়ে এখন তিনিও রোগাক্রান্ত হয়েছে। গিয়াস উদ্দিন সংসারে আয় করার মত একমাত্র ব্যক্তি। এখন তিনি অসুস্থ হওয়ায় সংসারে ঠিকমত জ্বলেনা চুলা। ওদের নানা মগনামা ইউপির সাবেক সদস্য আবু ছৈয়দ মেয়ের সংসারে হাল ধরেছে। তিনিও দরিদ্র। চট্টগ্রামে কোর্টে মুন্সিগিরি (এডভোকেট সহকারি) করে তার সংসার চালায়। তার পক্ষে ওদের সংসারের গ্লানি টানানো সম্ভব নয়। এদিকে দু’শিশুর এমন অবস্থায় কঠিন মানবেতর দিনাতিপাত করছে তার পরিবার। চিকিৎসার কারনে ওদের জীবন বিপন্ন। ওরা বাচতে চায়। বাচার স্বপ্ন দেখছে তার পরিবার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন বাচাতে হলে অপারেশন করতে হবে অবশ্যই। কিন্তু নেই অর্থ। মানুষ মানুষের জন্য। জীবন জীবনের জন্য। ওদের বাচাতে হলে সম্মলিত উদ্যেগ প্রয়োজন। অর্থের জন্য প্রয়োজন তহবিল গঠন। শিশু দু’জনকে বাচাতে এগিয়ে আসতে হবে বিত্তবান, সরকার, বিবেক ও সমাজকে। আমরা অবশ্যই পারি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে। শিশু দু’জন নিষ্পাপ। চিকিৎসার অধিকার আছে। রাষ্ট্রের কাছে ওদের আকুল মিনতি চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের বাচিয়ে রাখা হোক। অন্যতায় দরিদ্রতায় অভিশপ্ত হলে সমাজ ও মানবতা কলংকিত হবে। ওরা দু’জন আমাদের সন্তান। আমরা একটু সুদৃষ্টি দিলে এদের বাচিয়ে রাখার স্বপ্ন প্রশস্থ করতে পারে। প্রয়োজন জরুরী চিকিৎসা ও র্সাজারি। এ ব্যাপারে তাদের পিতা গিয়াস উদ্দিন জানান আমার কোন তওফিক নেই। খোদা আমার দু’ অবুঝ শিশুকে বাচিয়ে রাখার প্রার্থনা করছি। তিনি সমাজের বিত্তবান লোকদের সহযোগিতা কামনা করছি।

পাঠকের মতামত: